মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন নিষেধাজ্ঞার জেরে রুশ তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত তেল পরিশোধন প্রতিষ্ঠান এইচপিসিএল-মিত্তাল এনার্জি লিমিটেড (এইচএমইএল)। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সম্পর্ক যে ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, এই সিদ্ধান্ত সেই উত্তেজনাকে আরও গভীর করেছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, এইচএমইএল তাদের এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে রুশ অপরিশোধিত তেল আমদানি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা অব্যাহত রাখায় গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। মার্কিন কর্মকর্তারা অভিযোগ করে বলেছেন, মস্কোর বিশেষ ছাড়ে তেল কিনে ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ প্রচেষ্টায় উসকানি দিচ্ছে ভারত।
৩০ জুলাই রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশালে দেওয়া এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, ভারত রাশিয়ার সঙ্গে কী করছে, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। চাইলে তারা এক সঙ্গে নিজেদের মৃত অর্থনীতি ডুবিয়ে দিতে পারে। আমরা ভারতের সঙ্গে খুব সামান্য ব্যবসা করি। বিশ্বে তাদের শুল্কহার অন্যতম বেশি। একই ভাবে রাশিয়ার সঙ্গেও যুক্তরাষ্ট্রের তেমন কোনো বাণিজ্য নেই—আমি চাই, এই অবস্থাই থাকুক।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ ভারত এবং বর্তমানে সমুদ্রপথে রাশিয়ার অপরিশোধিত তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হওয়া সত্ত্বেও, বিগত এক সপ্তাহে দেশটির রাষ্ট্রীয় চারটি প্রধান তেল কোম্পানি— ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন (IOC), হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (HPCL), ভারত পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (BPCL), ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যালস (MRPL) রাশিয়া থেকে নতুন কোনো তেল ক্রয়ের অর্ডার দিচ্ছে না।
এইচএমইএলের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্যের ‘‘রুশ তেল আমদানির ওপর নতুন বিধিনিষেধ আরোপের পর’’ গত সপ্তাহে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিবৃতিতে এইচএমইএল বলেছে, ‘‘এইচএমইএলের ব্যবসায়িক কার্যক্রম ভারতের সরকার ও জ্বালানি নিরাপত্তা নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’’ রুশ তেলের ভারতের বেসরকারি খাতের প্রধান ক্রেতা রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ গত সপ্তাহে বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও এই সপ্তাহে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরোপিত বিধিনিষেধের প্রভাব পর্যালোচনা করছে।
এসব কোম্পানি এখন বিকল্প উৎস থেকে তেল সংগ্রহের পরিকল্পনা করছে। বিশেষ করে আবুধাবির মুরবান ক্রুড এবং পশ্চিম আফ্রিকার তেল আমদানির দিকে ঝুঁকছে ভারতীয় কোম্পানিগুলো। তবে এ বিষয়ে এসব কোম্পানি কিংবা ভারতের জ্বালানি মন্ত্রণালয় কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য দেয়নি।
ভারতে প্রতিদিন গড়ে ৫.২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল পরিশোধনের সক্ষমতা রয়েছে, যার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিগুলো এককভাবে ৬০ শতাংশেরও বেশি তেল পরিশোধন করে। যদিও ভারতের বেসরকারি তেল কোম্পানি রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ ও নায়ারা এনার্জি রুশ তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা হিসেবে রয়ে গেছে।
নতুন নিষেধাজ্ঞা ভারতীয় ক্রেতাদের তেল সরবরাহ ও অর্থ প্রদানের প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য করেছে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, নিষিদ্ধ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীদের বেশ কিছু চালান ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলোও কালো তালিকাভুক্ত কোম্পানির সঙ্গে লেনদেন না করায় কেউ ঝুঁকি নিতে চাইছে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের এই হুমকি ও বাণিজ্য নীতির অনিশ্চয়তার কারণে ভারত স্বল্পমেয়াদে রাশিয়ার ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চাইছে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি অংশীদারিত্বের বিষয়টি পুরোপুরি শেষ হয়ে যাচ্ছে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়।










